সারা আলী খানের জীবন গল্প ও বলিউডে আগমন… Life history of Sara Ali Khan and her entry of Bollywood
আজকের এই ভিডিওতে আমরা বলিউডের নতুন অভিনেত্রী সারা আলী খান সম্পর্কে জানবো। তিনি বলিউডে পা রেখেছেন ২০১৮ সালে আর ২০২০ সাল পর্যন্ত তিনি মাত্র ৪টি সিনেমা করেছেন কিন্তু এখনই তার একটি বিশাল ফ্যান বেজ তৈরি হয়ে গেছে। যাই হোক সারা আলী ১৯৯৫ সালে দিল্লিতে জন্মগ্রহন করেন। সেই হিসেবে তার বর্তমান বয়স হলো ২৫ বছর আর উচ্চতা ৫ ফিট ৪ ইঞ্চি।
সারা আলী খানের বাবা হচ্ছেন এক সময়ের জনপ্রিয় অভিনেতা সাইফ আলী খান আর তার মা হচ্ছেন এক সময়ের সফল অভিনেত্রী অমৃতা সিং যিনি সাইফ আলী খানের থেকে বয়সে প্রায় ১২ বছর বড় ছিল। তার দাদা হচ্ছেন মনসুর আলী খান পাধৌতি এক সময় ভারত জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক এবং তিনি ভিসন মারমুখি ব্যটসম্যান ছিলেন যার ফলে তাকে টাইগার পাধৌতিও বলা হতো। এমনকি ঐ সময় তাকে সর্ব কালের সেরা ফিল্ডারও বলা হতো। আর সারা আলী খানের দাদার বাবা ও ছিলেন ১৯৮৬ সালের ভারত জাতীয় টিমের সফল ক্রিকেট অধিনায়ক। সারা আলী খানের পূর্বপুরুষরা ভারতীয় জমিদার বা নবাব পরিবার ছিল আর তাইতো সাইফ আলী খানকে এখনো সবাই ছোট নবাব বলে। তাহলে বুঝতেই পারছেন অভিনয়ের দিক দিয়ে সাইফ আলী খান অতটা ধনী না হলেও পূর্বপুরুষের অর্থাৎ পৈত্রিক সম্পত্তির দিক দিয়ে সাইফ আলী খান অনেক ধনী। তার সম্পূর্ণ সম্পত্তি প্রায় ১৫০ মিলিয়ন US ডলার বা ১২৭৫ কোটি টাকা। তো বুঝতেই পারছেন সারা আলী খানের বংশ পরিচয় কনো অংশে কম নয়।
সারা আলী খানের একটি ভাই ও আছে ইব্রাহিম খান, যে দেখতে অবিকল সাইফ আলী খানের মতো। বাবা ছেলের চেহারায় যে এতো মিল থাকে তা ভাবাই যায় না তবে এক্ষেত্রে সাহ্রুখ ও তার ছেলেও পিছিয়ে নেই দুজনেই দেখতে একই রকম। সারা আলী খানের বয়স যখন ৯ বছর ২০০৪ সালে সাইফ আলী খান ও অমৃতা সিঙের ডিভোর্স হয়ে যায়। কোর্টের নির্দেশে ছেলে-মেয়ের দায়িত্ব অমৃতা সিং পান। এর পর প্রায় দুই বছর অমৃতা তার ছেলে-মেয়েদের সাইফ আলী খানকে দেখতে দেয় নি। এরপর ২০০৬ সালে অর্থাৎ ডিভোর্সের ২ বছর পর অমিতাবের কন বানেগা কারোরপাতি অনুষ্ঠানে সারা আলী খান ও সাইফ আলী খানের দেখা হয়। যাই হোক ২০১২ সালে সারা আলী খানের বাবা সাইফ আলী খান বিয়ে করেন বলিউডের একজন সফল অভিনেত্রী কারিনা কাপুরকে। মজার ব্যপার হলো, সাইফ আলী খান আর অমৃতা সিঙের যখন বিয়ে হয় তখন কারিনা কাপুর ও ঐ বিয়েতে দাওয়াত পান এবং সে উপস্থিত থাকেন। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১১ বছর। তখন কে জানত তিনি এই সাইফ আলী খানকেই এক সময় বিয়ে করবে। কারিনা কাপুর হলো সারা আলী খানের সৎ মা। ডিভোর্সের পর সাইফ আলী খান ও অমৃতা সিং কে এক সাথে দেখা না গেলেও, সাইফ আলী খানের বিয়েতে মেয়ের জন্য দেখা গিয়েছে। তিনি সারা আলী খানের জন্য ডিজাইনারের কাছ থেকে ড্রেস তৈরি করান যাতে তার মেয়েকে সব থেকে সুন্দর দেখা যায়। সারা আলী খান ও কারিনা কাপুরের মধ্যে অনেক বন্ধুত্ব সুলভ সম্পর্ক। সারা আলী খান, কারিনা কাপুরকে ছোট মা বলে ডাকেন না, কারিনা বলেই ডাকেন তাছাড়া সারা আলী খান তার সৎ ভাইদেরকেও অনেক ভালো বাসেন। অনেক ফ্যামিলি ফোটোসুটে তাদের একসাথে দেখা যায়।
এবার চলুন সারা আলী খানের কিছু ব্যক্তিগত জীবনের তথ্য সম্পর্কে জানা যাক। সারা আলী খানের প্রথম বয়ফ্রেন্ড ছিল এই ব্যক্তি। তার পর শোনা যায় সারা আলী খানের সম্পর্ক আছে শাহেদ কাপুরের ছোট ভাই ইশান কাত্তারের সাথে। যদিও সেটা ছিল সম্পূর্ণ গুজব। এরপর কেদারনাথ মুভি করার সময় প্রায়াত নায়ক সুসান্ত সিঙের সাথেও সারা আলী খানের একটা সম্পর্ক তৈরি হয়। কিন্তু মা অমৃতা সিং তাকে সুসান্ত সিঙের সাথে কনো সম্পর্কে জড়াতে নিষেধ করে যার ফলে তাদের সম্পর্ক আর আগে যায় নি। এমনকি একটি বিজ্ঞাপনের জন্য সুসান্ত সিং ও সারা আলী খানের কাছে অফার আসলে সুসান্ত সিং, সারা আলী খানের সাথে অভিনয় করবেন না বলে সরাসরি না করে দেন। তবে এগুলোকেও গুজব বলে ধরা হয়।
এখন ধারণা করা হচ্ছে সারা আলীর সাথে সম্পর্ক আছে বলিউডের কিউট নায়ক কার্তিক আয়নের সাথে। কার্তিক আয়নের সাথে দেখা করতে সারা আলী খান ১২০০ কিলোমিটার পথ পারি দিয়ে তার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন। আবার সারা আলীকে সাপোর্ট করতে কার্তিক আয়নও তার সিনেমার সুটিং বাদ দিয়ে চলে আসে ফ্যাশনশো তে। তবে অফিশিয়ালি এখনো তারা এই ব্যপারটি স্বীকার করেনি।
সারা আলী খান এখন পর্যন্ত ৪টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন এবং প্রতিটি সিনেমা করার জন্য সারা আলী খান এভারেজ প্রায় ৩ কোটি রূপি চার্জ করেন। সিনেমা ও বিভিন্ন পন্যের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হয়ে এই পর্যন্ত সারা আলী খান মোট ২ মিলিয়ন ডলার অর্থাৎ প্রায় ১৭ কোটি টাকা আয় করেন। সারা আলী খান তার মা ও ভাইয়ের সাথে মুম্বাইয়ের একটি বহুতল ভবনে বাস করে যার মালিক অমৃতা সিং। সারা আলী খান যে সব গাড়ি ব্যবহার করেন তার মধ্যে রয়েছে হোন্ডা CRV, যার মুল্য প্রায় ৩২ লক্ষ রূপি, জিপ কোম্পাস, ৩০ লক্ষ রূপি। বলিউড সেলিব্রিটি হিসেবে বা নবাব কন্যা হিসেবে সারা আলী খান খুব কম দামী গাড়ি ব্যবহার করে। তবে তার একটি দামী গাড়িও রয়েছে আর সেটি হলো রেঞ্জ রবার হোক। এই গাড়ি তাকে তার বাবা জন্মদিনে উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন। আসলে সারা আলী খানের বাবা অনেক ধনী হলেও সারা আলী খান অনেক সাধারন জীবন-যাপন করতে পছন্দ করেন। মিডিয়ায় তাকে একই ড্রেসে অনেক বার দেখা যায়। এই বিষয় যখন সাংবাদিক প্রশ্ন তোলেন তখন সারা আলী খান বলেন “ আমি সাধারন থাকতেই পছন্দ করি”। মাঝে মাঝে তো সে মধ্যবিত্তদের শপিংমলের ভিতরেই চলে যান শপিং করতে।
তো চলুন এবার জেনে নেয়া যাক সারা আলী খান কিভাবে সিনেমায় আসলেন। যেহেতু সারা আলী খানের বাবা-মা দুজনেই ছিলেন বলিউডের প্রথম শ্রেণীর অভিনেতা ও অভিনেত্রী সেহেতু সারা আলী খানও যে সিনেমায় বলিউডে আসবেন এটা নিশ্চিত ছিল। কিন্তু বাবা সাইফ আলী খানের কথা ছিল চলচ্চিত্রে আসতে চাও ভালো কথা কিন্তু প্রথমে পড়াশুনা শেষ করতে হবে। সারা আলী খান তার পড়াশুনা শেষ করে যখন আমেরিকায় গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করতে যান তখন তিনি পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম নামে এক রোগে আক্রান্ত হন। যার ফলে তার ওজন মারাত্মক লেভেলে বাড়তে থাকে। কিন্তু তার স্বপ্ন সে একজন বলিউড অভিনেত্রী হবে। নিজের ট্রিট্মেন্ট করিয়ে তিনি একটি জিমে ভর্তি হন। দেড় বছরের কোঠর পরিশ্রম ও ডায়েটের ফলে তিনি তার অভিনেত্রী হবার মতো বডি ফিরে পান। যখন তিনি এই জিম করেন তখন এই ব্যপারে ফ্যামালির কাউকে জানাননি কারন তিনি সবাইকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলেন। তিনি যখন দেশে ফিরে আসেন তখন এয়ারপোর্টে তার মা তাকে চিন্তেই পারিনি। ভেবে দেখুন নায়িকা হবার জন্য সারা আলী খান কতটা ডিটারমাইন্ড ছিলো।
ইন্ডিয়াতে আসার পরই তার বাবার পরিচিত পরিচালক অভিষেক কাপুরের মাধ্যমে কেদারনাথ মুভিতে সে প্রথম অভিনয় শুরু করে এবং তার বিপরিতে নায়ক ছিল শুশান্ত। সিনেমার মাঝামাঝি সময় সিনেমার প্রডিউসার ও পরিচালকের মধ্যে ঝগড়ার কারণে সিনেমা বন্ধ হয় যায়। এরপর ৩ মাস সিনেমার কাজ বন্ধ থাকার পর রোহিত সেট্টি ও কারান জোহার সিনবা মুভির সুটিং শুরু করতে যাচ্ছিল। তখন রোহিত সেট্টি রনবির সিং এর বিপরীতে সারা আলী খানকে পছন্দ করেন সিনেমার জন্য। এরই মধ্যে কেদারনার মুভির পরিচালক ও প্রডিউসারের মধ্যে ঝগড়া শেষ হবার পর ঐ মুভিরও সুটিং শুরু হয়। কিন্তু এইদিকে সারা আলী খান সিনবা সিনেমার সুটিং নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন তাই তার হাতে কেদারনাথ সিনেমা করার মতো সময় ছিল না। তখন কেদারনাথ সিনেমার প্রডিউসার সারা আলী খানের নামে ৫ কোটি রূপি ক্ষতিপুরনের মামলা আদালতে দায়ের করেন। পরে সাইফ আলী খান আদালতের বাইরেই বিষয়টা মিটিয়ে ফেলেন এবং সারা আলী খান তালমিল করে দুটি সিনেমাতেই সুটিং করে।
২০১৮ সালের একেবারে শেষ দিকে ডিসেম্বারের ৭ তারিখে কেদারনাথ সিনেমাটি মুক্তি পায়। এই মুভির কাহিনি ছিল একটি হিন্দু মেয়ে ও মুসলিম ছেলের প্রেমের গল্প নিয়ে যা ভারতের উত্তর খন্ডের জাতীয়পার্টির এক দলের খারাপ লাগে তাই তারা উত্তরখন্ডে এই সিনেমাটি বন্ধ করে দেয়। তবুও ৬০ কোটি রূপি বাজেটের সিনেমা ৯৭ কোটি রূপি কামিয়ে হিট হয়ে যায়। এই সিনেমাতেই তিনি সবার নজর কাড়েন এবং তার এই প্রথম সিনেমাতেই তিনি আইফা অ্যাওয়ার্ড জয় করেন। তারই ঠিক ২০ দিন পর মুক্তি পায় সিনবা মুভিটি। অর্থাৎ ডিসেম্বারের ২৭ তারিখেই। ৮০ কোটি টাকা বাজেটের এই মুভিটি ৪০০ কোটি টাকা কামিয়ে ব্লক বাস্টার হিট হয়। বিশেষ করে ঐ সিনেমার গান, ও লারকি আখ মারে।
২০১৮ সালে এই দুটি মুভি করেই সারা আলী খান জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। তার এই সাফলতার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেছেন বলিউডে তিনি তার বাবার জন্যই আসতে পেরেছেন। তবে টিকে থাকতে হলে তাকেই কিছু করে দেখাতে হবে। স্টার কিড হওয়াতে খুব সহজেই যেমন তিনি বলিউডে প্রবেশ করতে পেরেছে তেমনি নিজের অবস্থান বজায় রাখতে হলে তাকেও প্রমান করতে হবে নিজেকে নতুবা অন্যান্য স্টার কিডদের মতো তিনিও হয়তো হারিয়ে যাবেন বলিউডের এই জমকালো দুনিয়ায়।