শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০১:১৪ অপরাহ্ন

মদিনাবাসী সৌভাগ্যবান!

নিজস্ব প্রতিবেদক :
  • সময় কাল : সোমবার, ২৭ মার্চ, ২০২৩
  • ৬৮৩ বার পড়া হয়েছে।
Spread the love

আমাদের প্রাণের ভূমি মদিনা। প্রিয় নবী মুহাম্মাদ(সা.) ও সাহাবায়ে কেরামের বরকতময় স্মৃতিবিজড়িত পবিত্র শহর মদিনা। এই পুণ্যভূমিতেই সবুজ গম্বুজের ছায়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)। তাঁর পবিত্র দেহ বুকে ধারণ করে মদিনা চিরধন্য। তাঁর নাম শোনামাত্রই হৃদয়ের আয়নায় ভেসে ওঠে এক স্বর্গীয় নগরীর ছবি। প্রেম, ভালোবাসা আর শ্রদ্ধাবোধে ভরে যায় মন। মুমিনের জীবনে আল্লাহর ঘর জিয়ারত ও প্রিয় হাবিবের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে সালাম জানানোর চেয়ে বড় কোনো প্রাপ্তি হতে পারে না।

মদিনার মর্যাদা
মদিনা বরকতপূর্ণ নগরী। এর বরকতের জন্য প্রিয়নবী (সা.) আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছিলেন,
‘হে আল্লাহ! আপনি মক্কায় যে বরকত দান করেছেন, তার দ্বিগুণ বরকত মদিনায় দান করুন।’
(সহিহ মুসলিম ৩৩৯২)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমাকে এমন এক নগরীতে বসবাসের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যা মর্যাদায় সব শহরকে ছাড়িয়ে যাবে। মানুষ তাকে ইয়াসরিব বলে। তার নাম হলো মদিনা। তা মন্দ চরিত্রের লোকদের এমনভাবে দূর করে দেবে, যেমন কামারের ভাট্টি লোহার ময়লা দূর করে।’
(সহিহ বুখারি ১৮৭১)

মদিনার প্রতি রাসুল (সা.)-এর ভালোবাসা
আয়েশা (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘হে আল্লাহ! তুমি মদিনাকে আমাদের কাছে এমনই প্রিয় করে দাও, যেমনি প্রিয় করেছ মক্কাকে। বরং তার চেয়েও বেশি প্রিয় করে দাও।’
(সহিহ বুখারি ৬৩৭২)

আনাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন কোনো সফর থেকে মদিনায় ফিরে আসতেন, তখন দূর থেকে মদিনার ঘরবাড়ি দেখেই তাঁর উটের গতি বাড়িয়ে দিতেন। অন্য কিছুতে আরোহিত থাকা অবস্থায় ভালোবাসার আতিশয্যে তা নাড়াচাড়া শুরু করে দিতেন।
(সহিহ বুখারি ১৮৮৬)

আবু হুমাইদ সায়েদি (রা.) বলেন, “আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে তাবুক যুদ্ধ থেকে ফিরে আসছিলাম। যখন আমরা মদিনার নিকটবর্তী হলাম, রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘এই তো পবিত্র ভূমি। এই তো ওহুদ পাহাড়, যে পাহাড় আমাদের ভালোবাসে, আমরাও তাকে ভালোবাসি’।”
(সহিহ বুখারি ৪৪২২)

মদিনাবাসীর ফজিলত
মদিনাবাসী আনসার সাহাবিদের সম্পর্কে আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আর ওই সব লোক, যারা তাতে (মদিনায়) আগে থেকেই ইমানের সঙ্গে বসবাস করছে। যারা হিজরত করে তাদের কাছে আসে, তাদের তারা ভালোবাসে। আর যা কিছু তাদের (মুহাজিরদের) দেওয়া হয়, তার জন্য নিজেদের অন্তরে কোনো চাহিদা বোধ করে না। আর তাদের (মুহাজিরদের) তারা নিজেদের ওপর প্রাধান্য দেয়, যদিও তারা অভাব-অনটনে ভোগে।’
(সুরা হাশর ৯)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মদিনার অধিবাসীদের কোনো ক্ষতি সাধন করতে চায়, আল্লাহ তাকে নিশ্চিহ্ন করে দেবেন, যেভাবে লবণ পানির মধ্যে মিশে যায়।’
(সহিহ বুখারি ১৭৪৪ সহিহ মুসলিম ১৩৮৬)

মদিনার ইমান ও নিরাপত্তার স্থান
মদিনা থেকেই ইমানের আলো সারা বিশ্বে বিচ্ছুরিত হয়েছিল। শেষ যুগে মানুষ যখন ইমান থেকে বিচ্যুত হতে থাকবে, তখন ইমান তার গৃহে তথা মদিনার দিকে ফিরে আসবে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ইমান মদিনার দিকে ফিরে আসবে, যেভাবে সাপ তার গর্তের দিকে ফিরে আসে।’
(সহিহ বুখারি ১৮৭৬)

হযরত আলী (রা) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইশারা করে বলেন, ‘মদিনা আয়ির পর্বত থেকে ওখান পর্যন্ত হারাম (সম্মানিত)। তাতে কোন হাদাস (বিদাত/ফিতনা, কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কর্ম) সৃষ্টি করা যাবে না। যে ব্যক্তি তাতে হাদাস সৃষ্টি করলো বা কোন মুহদিসকে (যে ব্যক্তি অন্যায় করে) আশ্রয় দিল তার উপর আল্লাহ্‌ ও ফেরেশতা ও সমগ্র মানুষের লানত। কিয়ামত দিবসে আল্লাহ্‌ তার কোন ফরয ও নফল ইবাদত কবুল করবেন না।’
(সহিহ বুখারি ১৮৭০, ৭৩০৬, সহিহ মুসলিম ১৩৭১, আবু দাউদ ২০৩৪)

দাজ্জালের আবির্ভাবে ফিতনা যখন বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়বে, পৃথিবীবাসী ভীত থাকবে। পৃথিবীর সর্বত্র বিচরণ করতে সক্ষম হলেও তখন সে পবিত্র মদিনায় প্রবেশ করতে পারবে না। হাদিসে আছে,
‘মক্কা ও মদিনা ছাড়া এমন কোনো শহর নেই, যা দাজ্জালের পদার্পণে বিপর্যস্ত হবে না। মক্কা-মদিনার প্রতিটি ফটকেই ফেরেশতারা সারিবদ্ধ হয়ে পাহারা দেবেন। তখন মদিনা তার অধিবাসীদেরসহ তিনবার কেঁপে উঠবে। আর সব কাফির ও মুনাফিক মদিনা ছেড়ে চলে যাবে।’
(সহিহ বুখারি ১৮৮১)

অন্য হাদিসে আছে, “মদিনায় দাজ্জালের প্রভাব পৌঁছবে না। সেদিন মদিনার সাতটি ফটক থাকবে। প্রতিটি ফটকে দু’জন করে ফেরেশতা পাহারা দেবেন।”
(সহিহ বুখারি ১৮৭৯, মুসনাদে আহমাদ ৫/৪৭)

এ পবিত্র নগরীতে কোন পাপিষ্ঠ আশ্রয় পায় না। এ প্রসঙ্গে হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত একটি হাদিস “একবার এক বেদুইন মদিনার অধিবাসী হওয়ার জন্য প্রিয় নবী (সা.)-এর হাতে বায়আত গ্রহণ করলো। এর পরেই সে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়লো। তখন সে প্রিয় নবীর কাছে এসে বললো, হে মুহাম্মদ! আমার বায়আত প্রত্যাহার করুন। প্রিয় নবী অস্বীকার করলেন। এরপর সে আবার এসে বললো, আমার বায়আত প্রত্যাহার করুন। প্রিয় নবী অস্বীকার করলেন। এরপর সে পুনরায় এসে বললো, আমার বায়আত প্রত্যাহার করুন। প্রিয়নবী এবারও অস্বীকার করলেন, তখন বেদুইন লোকটি মদিনা থেকে বের হয়ে গেলো। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, পবিত্র মদিনা হলো স্বর্ণকারের অগ্নিকুন্ডের মত। তা যেমন স্বর্ণের গায়ে কোন খাদ থাকতে দেয় না তেমনিভাবে মদিনাও তার মাঝে আবর্জনা (পাপিষ্ঠকে) থাকতে দেয় না। সে কেবল নির্ভেজালকেই তার বুকে আশ্রয় দেয়।”
(সহিহ বুখারি ১৮৮৩, সহিহ মুসলিম ১৩৮৩)

মদিনা মক্কার মতই নিরাপদ ও হারাম (সাম্মানিত)
‘রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনার দিকে ইশারা করে বলেন, মদিনা হারাম তথা সম্মানিত ও নিরাপদ।’
(সহিহ মুসলিম ২৪৪৩)

অন্যত্র বলেন, ‘ইব্রাহীম (আঃ) মক্কাকে হারাম (সম্মানিত) সাব্যস্ত করেছেন। আর আমি মদিনাকে হারাম করছি। তাতে কারো জন্য রক্তপাত বৈধ নয়। যুদ্ধের জন্য অস্ত্র হাতে নেয়া যাবে না। তার বৃক্ষ কর্তন করা যাবে না।’
(সহিহ মুসলিম)

মদিনার আলেমদের মর্যাদা
একটা সময়ে মানুষ হন্যে হয়ে ইলম অনুসন্ধান করবে তবে মদীনার আলেমের চেয়ে অধিক বিজ্ঞ কোন আলেম তারা খুঁজে পাবে না।
[তিরমিজি ২৬৮০, ইবনে মাজাহ ২৩০৮, হাকেম (যয়ীফ)] হাদিসটি দুর্বল হলেও যেহেতু এর দ্বারা কোন আমল সাব্যস্ত হয়নি এবং কতিপয় গ্রন্থে লিপিবদ্ধ হয়েছে সেহেতু এর গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।

মদিনায় মসজিদে নববী
মদিনা যাওয়ার একমাত্র উদ্দেশ্যই হবে মসজিদে নববী জিয়ারত করা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “তিন মসজিদ ব্যতীত অন্য কোথাও সফর করা যাবে নাঃ মসজিদে হারাম, আমার এ মসজিদ ও মসজিদে আকসা।” (সহিহ বুখারি ২৮১)

মদিনার মসজিদের রয়েছে সবিশেষ গুরুত্ব। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমার এই মসজিদে নামাজ আদায় মক্কার মসজিদুল হারাম ছাড়া অন্য সব মসজিদে নামাজ অপেক্ষা এক হাজার গুণ বেশি সাওয়াব।’
(সহিহ বুখারি ১১৯০, সহিহ মুসলিম ২৪৬৯)
কিছু দুর্বল বর্ণনায় পঞ্চাশ হাজার গুণের কথাও রয়েছে।

এছাড়াও এখানে ইসলামের প্রথম মসজিদ কুবা অবস্থিত যার মর্যাদা সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার বাড়িতে সুগন্ধি লাগিয়ে মসজিদে কুবাতে এসে সালাত আদায় করলো সে উমরার ন্যায় সওয়াব পাবে।’
(ইবনে মাজাহ ১৪০২, নাসায়ী ২/৩৭)

আরেক বর্ণনায় রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার এই মসজিদে লাগাতার ৪০ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেছে, এর মধ্যে কোনো নামাজ ছোটেনি, সে মোনাফেকি ও দোজখের আজাব থেকে নাজাত পাবে।’
(মুসনাদে আহমাদ ১২৫৮৩)

কবরের পশ্চিম দিকে রাসুল (সা.)-এর মিম্বার পর্যন্ত স্থানটুকুকে ‘রিয়াজুল জান্নাত’ বা বেহেশতের বাগিচা বলা হয়। এটি দুনিয়ায় একমাত্র জান্নাতের অংশ।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমার মিম্বার ও ঘরের মাঝখানের অংশটুকু জান্নাতের বাগিচাসমূহের একটি বাগিচা।’
(সহিহ বুখারি ১১৯৫)

মসজিদে নববীর পাশে আয়েশা (রা.)-এর হুজরায় অবস্থিত নবীজির কবর। তারই পাশে হজরত আবু বকর (রা.) ও উমর (রা.)-এর কবর। এর পাশে আরেকটি কবরের জায়গা খালি আছে, এখানে হজরত ঈসা (আ.)-এর সমাধি হবে।
(তিরমিজি ৩৬১৭)

মসজিদে নববীর পূর্ব দিকে অবস্থিত বাকি গোরস্তানে অসংখ্য সাহাবা, তাবেইন, আউলিয়া ও নেককার মুসলমানের কবর রয়েছে। এর মধ্যে হজরত উসমান, আলী, ইবনে মাসউদ, ফাতিমা, আয়েশা, রাসুল (সা.)-এর দুধ মা হালিমা, চাচা আব্বাস, রাসুল (সা.)-এর ছেলে ইব্রাহিম, হাসান রাদিয়াল্লাহু আনহুম সহ অনেকের কবর আছে। রাসুল (সা.) প্রায়ই বাকি জিয়ারতে যেতেন।

মদিনায় মৃত্যুর ফজিলত
হাদিসে এসেছে : ‘তোমাদের মধ্যে যার পক্ষে সম্ভব হয়, সে যেন মদিনায় মৃত্যুবরণ করে। কেননা যে ব্যক্তি মদিনায় মৃত্যুবরণ করবে, আমি তার জন্য সুপারিশ করব।’
(তিরমিজি ৩৯১৭, ইবনে হিব্বান ৩১৪১)

মদিনার ফলমূলের বৈশিষ্ট্য
সাধারণত খেজুর অত্যন্তু ওষধী ও পুস্তিগুণ সমৃদ্ধ একটি ফল। কিন্তু হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী, মদীনা মুনাওয়ারার আজওয়া অথবা অন্য কোন খেজুরের রোগ-ব্যাধি উপশম বিশেষ করে যাদু ও বিষক্রিয়া প্রতিরোধে বিশেষ বৈশিষ্ট প্রমাণিত হয়। হাদিসে এসেছে, “যে ব্যক্তি সকালে সাতটি ‘আজওয়া’ খেজুর ভক্ষণ করবে সেদিন কোন প্রকার বিষ ও যাদু তার ক্ষতি করতে পারবে না।”
(বুখারী, মুসলিম, মেশকাত, পৃ. ৩৬৪)

“(মদীনার) উচ্চভূমির আজওয়া’ খেজুরের মধ্যে রোগের নিরাময় রয়েছে । আর উহা ভোরে খাওয়া বিষের প্রতিষেধক’।”
(মুসলিম, মিশকাত ৪১৯১)

“যে ব্যক্তি সকালে মদীনার সাতটি খেজুর খাবে সন্ধ্যা পর্যন্ত কোন বিষ তার ক্ষতি করবে না।”
(সহীহ মুসলিম ২০৪৭)

মদিনার লোকেরা গাছে প্রথম ফল এলে প্রিয় নবী (সা.)-এর কাছে নিয়ে আসতেন। এরপর তিনি তা হাতে নিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন- ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাদের ফলমূলে বরকত দান করুন, আমাদের মদিনায় বরকত দান করুন, আমাদের ছায়ে বরকত দান করুন, আমাদের মুদে বরকত দান করুন। হে আল্লাহ! ইবরাহিম তোমার বান্দা, খলিল ও নবী। আমিও তোমার বান্দা ও নবী। তিনি মক্কায় বরকতের জন্য তোমার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন। আমি মদিনায় বরকতের জন্য তোমার কাছে প্রার্থনা করছি যেরূপ তিনি মক্কার জন্য করেছিলেন।’
(মুসলিম, মেশকাত, পৃ. ২৩৯)

মদিনা জ্বরমুক্ত জায়গা
প্রিয় নবী (সা.) মদিনাকে জ্বরমুক্ত করার জন্য আল্লাহ তা’আলার কাছে দোয়া করেছিলেন। হাদিসে এসেছে, হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদিনায় আগমন করলেন তখন (আমার পিতা) আবু বকর (রা.) ও বেলাল (রা.) জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়লেন। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে গিয়ে জানালাম। তখন তিনি দুআ করলেন হে আল্লাহ! আপনি আমাদের অন্তরে মদিনার ভালোবাসা ঢেলে দিন মক্কার প্রতি আমাদের ভালোবাসার মত; এমনকি তার থেকেও বেশি, মদিনাকে স্বাস্থ্যকর করুন, আমাদের জন্য তার ছা ও মুদে (দু’টি পরিমাপক) বরকত দান করুন এবং তার জ্বরকে স্থানান্তরিত করে ‘জুহফায়’ পতিত করুন।”
(বুখারী, মুসলিম, মেশকাত, পৃ. ২৩৯)

কেয়ামতের পূর্বে সর্বশেষ ধ্বংস হবে মদিনা
কিয়ামতের পূর্বে মদিনা সর্বশেষ জনপদ হিসেবে বিরান হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘(কিয়ামতের পূর্বে) ইসলামের সর্বশেষ যে জনপদটি ধ্বংস হবে তা হচ্ছে মদিনা।’
(তিরমিজি ৩৯১৯)
অর্থাৎ, যতদিন মদিনা আছে ততদিন ইসলাম আছে।
আসুন, মদীনার মর্যাদা সমর্কে কিছু দুর্লভ হাদীস জেনে নেই।

আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইবনু নূমায়র (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ সাপ যেমন সঙ্কুচিত হয়ে আপন গর্তে আশ্রয় নেয়, তদ্রুপ ইসলামও (সঙ্কুচিত হয়ে) মদিনায় আশ্রয় নেবে। (সহীহ মুসলিম)

মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি এখানকার দুঃখকষ্ট ও বিপদ আপদে ধৈর্যধারণ করে আমি কিয়ামতের দিন তার পক্ষে সাক্ষী হব অথবা তার শাফাআতকারী হব। ‘এখানকার’ বলতে মদিনাকে বুঝানো হয়েছে। (সহীহ মুসলিম)

ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মদিনার প্রবেশ পথে ফিরিশতাগণ প্রহরারত। সেখানে প্লেগ ও দাজ্জাল প্রবেশ করতে পারবে না। (সহীহ মুসলিম)

কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (মদিনার) লোকদের উপর এমন এক সময় আসবে যখন কোন ব্যক্তি তার চাচাত ভাইকে এবং নিকটাত্নীয়কে ডেকে বলবে আস কোন উর্বর এলাকায় গিয়ে বসতি স্থাপন করি, আস কোন শস্য-শ্যামল এলাকায় গিয়ে বাস করি। কিন্তু মদিনাই তাদের জন্য উত্তম যদি তারা জানত! সেই সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ! যদি কোন ব্যক্তি মদিনার উপর রিবক্ত হয়ে চলে যায় তবে আল্লাহ তায়ালা তার চাইতে উত্তম ব্যক্তি তার স্থলবর্তী করবেন। সাবধান! মদিনা হচ্ছে হাপর তুল্য, যা নিজের মধ্য থেকে নিকৃষ্ট জিনিস (ময়লা) বের করে দেয়। কিয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষন মদিনা তার বুক থেকে নিকৃষ্ট লোকদের বের করে না দেবে যেমন হাপর লোহার ময়লা দূর করে দেয়। (সহীহ মুসলিম)

মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম, ইবরাহীম ইবনু দীনার ও মুহাম্মাদ রাফি (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূল কাসিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি এই শহরের অর্থাৎ মদিনার অধিবাসীদের ক্ষতি করতে চাইবে আল্লাহ তাকে এমনভাবে গলিয়ে দিবেন যেমন লবণ পানিতে গলে যায়। (সহীহ মুসলিম)

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ বিভাগের আরও খবর

Advertisement

এই নিউজ পোর্টাল এর কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি ও দণ্ডনীয় অপরাধ ।
Design & Developed by Online Bangla News
themesba-lates1749691102