প্রথমে দাঁড়িয়ে তাকবীরে তাহরীমা বলে কান পর্যন্ত হাত উঠিয়ে নামাজ শুরু করতে হয়। তারপর সানা পড়তে হয়। সানা কেবল প্রথম রাকাতে পাঠ করতে হয়। প্রতি রাকাতে প্রথমে সুরা ফাতিহা ও অপর একটি সুরা বা অংশ বিশেষ পাঠ করতে হয়।
বাংলাদেশের বেশির ভাগ মুসলমান হানাফি মাজহাব অনুসরণ করে থাকে। তাই হানাফি মাজহাব নিয়ম অনুসারে নামাজ পড়ার সংক্ষিপ্ত নিয়ম উল্লেখ করা হল-
আমরা প্রথমে অজুসহকারে নামাজে দাঁড়িয়ে যাব । তার পর নামাজের নিয়ত করে উভয় হাত কান পর্যন্ত উঠাব । তাকবিরে তাহরিমা বলার পর বাঁ হাতের ওপর ডান হাত রেখে নাভির নিচে রাখুন। হাত বাধা নিয়ে ভিবিন্নন মতামত আছে । এরপর অনুচ্চৈঃস্বরে বলুন, উচ্চারণ : ‘সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়াবি হামদিকা ওয়া তাবারা কাসমুকা ওয়া তাআলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা।’
অর্থ : হে আল্লাহ! আমরা তোমারই পবিত্রতা ও প্রশংসা বর্ণনা করছি, তোমার নামই বরকতপূর্ণ এবং তোমার গৌরবই সর্বোচ্চ, তুমি ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই। (নাসায়ি, হাদিস : ৮৮৯)
এরপর অনুচ্চৈঃস্বরে আউজুবিল্লাহ (আউজু বিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজিম), তারপর বিসমিল্লাহ (বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম) পড়ুন। (তাহাবি : ১/৩৪৭)
এবার সুরা ফাতিহা পড়ুন। শেষ হলে অনুচ্চৈঃস্বরে আমিন বলুন। হানাফি মাজহাব মতে, আমিন আস্তে পড়া উত্তম। তবে জোরে আমিন বলার ব্যাপারে ইমামদের মতামত পাওয়া যায়। কেউ কেউ উচ্চস্বরে পড়ে থাকেন ।
সুরা ফাতিহা শেষ হলে একটি সুরা বা যে কোন সুরার তিনটি ছোট আয়াত, যা কমপক্ষে লম্বা একটি আয়াতের সমতুল্য হয় তা পড়া । (আবু দাউদ, হাদিস : ৬৯৫)
উপরে উল্লিখিত পরিমাণ তিলাওয়াত নামাজ শুদ্ধ হওয়ার জন্য আবশ্যক। তবে নামাজে কোরআন তিলাওয়াতের সুন্নত পরিমাণের বিবরণও ফিকহের কিতাবে উল্লেখ রয়েছে।
অতঃপর আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যান। রুকুতে মাথা নিতম্বের বরাবর করুন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৭২৯)
রুকুতে আঙুলগুলো ছড়িয়ে দিয়ে হাঁটু গিরা আঁকড়ে ধরা । (মুজামে সাগির ২/৪৯৭)
রুকুতে কমপক্ষে তিনবার ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম’ পড়ুন। বা তার বেশি পড়তে পারেন । (তিরমিজি, হাদিস : ২৪২)
এবার রুকু থেকে ‘সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলে মাথা উঠান। মুক্তাদি হলে অনুচ্চৈঃস্বরে শুধু ‘রাব্বানা লাকাল হামদ’ বলুন। এরপর তাকবির তথা আল্লাহু আকবার বলে সিজদায় যাওয়া । (সহিহ বুখারি, হাদিস নম্বর : ৭৪৭)
সিজদায় যাওয়ার সময় প্রথমে হাঁটু, তারপর হাত, তারপর উভয় হাতের মধ্যে কপাল মাটিতে রাখুন। নিজের পেট রান থেকে এবং বাহুকে পার্শ্বদেশ থেকে পৃথক করে রাখুন। হাত ও পায়ের আঙুলকে কিবলামুখী করে রাখুন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭৮৫)
সিজদায় কমপক্ষে তিনবার ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আলা’ পড়ুন। (তিরমিজি, হাদিস : ২৪২)
এরপর সিজদা থেকে উঠার সময় সর্বপ্রথম মাথা উঠিয়ে উভয় হাত রানের ওপর রেখে স্থিরতার সঙ্গে বসে পড়ুন। এরপর তাকবির বলে দ্বিতীয় সিজদা করুন। দ্বিতীয় সিজদায়ও কমপক্ষে তিনবার তাসবিহ পড়ুন। বিজোড় সংখ্যায় এর বেশিও পড়া যাবে। অতঃপর জমিনে হাত দ্বারা ঠেক না দিয়ে এবং না বসে সরাসরি তাকবির বলে দাঁড়িয়ে যান। এ পর্যন্ত প্রথম রাকাত সম্পন্ন হলো।
এখন দ্বিতীয় রাকাত আরম্ভ হলো। এতে হাত উঠাবেন না, ছানাও পড়বেন না, আউজুবিল্লাহও পড়বেন না। তবে আগের মতো সুরা ফাতিহা ও সঙ্গে অন্য একটি সুরা পড়ে রুকু-সিজদা করবেন। দ্বিতীয় সিজদা শেষ করে ডান পা খাড়া করে বাঁ পা বিছিয়ে দিয়ে তার ওপর বসে যাবেন। তখন আপনার হাত থাকবে রানের ওপর এবং ডান পায়ের আঙুলগুলো থাকবে কিবলামুখী। (মুসলিম, হাদিস : ৯১২)
অতঃপর নিম্নের তাশাহহুদ পড়বেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭৮৮)
উচ্চারণ : ‘আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস সালাওয়াতু ওয়াত তায়্যিবাত। আসসালামু আলাইকা, আইয়্যু হান্নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। আস সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহিন। আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহ।’
তাশাহহুদ পড়ার সময় ‘আশহাদু আল-লা ইলাহা’ পড়ার সময় শাহাদাত আঙুল উঁচু করে ইশারা করবেন। আর ‘ইল্লাল্লাহু’ বলার সময় আঙুল নামিয়ে ফেলবেন।
তবে তাশাহহুদের বাক্য ও আঙুল দিয়ে ইশারা করার বিষয়ে অন্য নিয়মও ইমামদের বক্তব্যে দেখা যায়। তাই বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি কাম্য নয়।
যদি দুই রাকাতবিশিষ্ট নামাজ হয়, যেমন—ফজরের নামাজ ইত্যাদি, তাহলে তাশাহহুদের পর নিম্নের দরুদ শরিফ পাঠ করবেন। (মুসলিম, হাদিস : ৬১৩)
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মদ, ওয়ালা আলি মুহাম্মদ, কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আলি ইবরাহিম, ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মদ, ওয়ালা আলি মুহাম্মদ, কামা বারাকতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আলি ইবরাহিম, ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ।’
এরপর পবিত্র কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত যেকোনো দোয়া পাঠ করবেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, ১/২৯৮)
যেমন—এই দোয়া পড়তে পারেন। এটাকে দোয়ায়ে মাসুরা বলা হয়। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭৯)
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি জালামতু নাফসি জুলমান কাসিরাও ওলা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা, ফাগফিরলি মাগফিরাতাম-মিন ইনদিকা, ওয়ার হামনি ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহিম।’
অথবা এই দোয়া পড়বেন—উচ্চারণ : ‘রাব্বানা আতিনা ফিদ-দুনইয়া হাসানাহ, ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাহ, ওয়া কিনা আজাবান-নার।’
এরপর ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ বলতে বলতে ডানে এবং বাঁয়ে মাথা ফেরাবেন। সালাম ফেরানোর সময় আপনার পাশের নামাজি ব্যক্তি এবং ফেরেশতাদের কথা স্মরণ করবেন।
যদি নামাজ তিন রাকাতবিশিষ্ট হয়, যেমন—মাগরিবের নামাজ, তখন প্রথম বৈঠকে তাশাহহুদের পর আর কিছু পড়বেন না। বরং ‘আল্লাহু আকবার’ বলে সোজা দাঁড়িয়ে যাবেন। (তিরমিজি, হাদিস : ২২৪)
তবে তৃতীয় রাকাতে শুধু সুরা ফাতিহা পড়বেন। আর নামাজ যদি চার রাকাতবিশিষ্ট হয়, যেমন—জোহর, আসর ও এশার নামাজ, তখন চতুর্থ রাকাতেও শুধু সুরা ফাতিহা পড়বেন। এরপর প্রথম দুই রাকাতের মতো রুকু-সিজদা করে দুই রাকাত সম্পন্ন করে শেষ বৈঠকে বসবেন। সেখানে উল্লিখিত পদ্ধতিতে তাশাহহুদের পর দরুদ এবং এরপর দোয়ায়ে মাসুরা পড়ে উভয় দিকে সালাম ফেরাবেন।
আরো পড়ুন–
রমজানে কুরআন তিলাওয়াতের গুরুত্ব ও ফজিলত
তাহাজ্জুদ নামাজ এর গুরুত্ব
ও ফজিলত