আমরা সকলে জানি কোন সুসংবাদ পেলে আমরা আলহামদুলিল্লাহ বলে থাকি । আজ আমরা আলহামদুলিল্লাহ পড়ার ফজিলত সম্পর্কে জানব ।।
হাদিসে এসেছে, ‘আল্লাহ তায়ালার মাহাত্ম্য বর্ণনা ও প্রশংসার জন্য আলহামদুলিল্লাহ থেকে উত্তম বাক্য আর নেই। (তিরমিজি) আরেক হাদিসে বলা হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা সব থেকে বেশি নিজের প্রশংসা পছন্দ করেন, এ জন্য তিনি নিজের প্রশংসা করেছেন এবং আমাদেরও তাঁর প্রশংসার নির্দেশ দিয়েছেন।’ (বুখারি)
হাদিসে আলহামদুলিল্লাহকে সবচেয়ে উত্তম দোয়া বলা হয়েছে। মহানবী (সা.) এরশাদ করেন, ‘সর্বোত্তম ফজিলতপূর্ণ বাক্য লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং সর্বোত্তম দোয়া আলহামদুলিল্লাহ।’ (তিরমিজি) মহানবী (সা.) আরও বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ আমলের পাল্লা পূর্ণ করে দেয়। আর সুবহানাল্লাহ ও আলহামদুলিল্লাহ শব্দ দুটি আসমান ও জমিনের খালি জায়গা পূর্ণ করে দেয়।’ (মুসলিম)
আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর প্রশংসাসূচক বাক্য।আলহামদুলিল্লাহ শব্দটি ভালো কোন কিছুর জন্য এটি বলা হয়ে থাকে । আলহামদুলিল্লাহ শব্দের অর্থ সকল প্রশংসা । আমরা সাধারণত ভালো কোনো খবর শুনলে আলহামদুলিল্লাহ বলে থাকি তবে আলহামদুলিল্লাহ শব্দটি মাধ্যমে বোঝানো হয়ে থাকে যে , প্রশংসা মহান আল্লাহর আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর প্রশংসাসূচক বাক্য। তাই আমরা বেশি বেশি আলহামদুলিল্লাহ বলব ।
আসওয়াদ ইবনে সারিয়া (রা.) বলেন, একবার আমি মহানবী (সা.)-কে বললাম, ‘আমি আল্লাহ তায়ালার শানে কিছু প্রশংসা বাক্য বলতে চাই—যদি আপনার অনুমতি থাকে।’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহ তায়ালা নিজের প্রশংসা অনেক পছন্দ করেন।’ (মুসনাদে আহমাদ)
মহানবী (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রিয় বাক্য চারটি, সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার…।’ (মুসলিম)
আলহামদুলিল্লাহ পড়ার ফজিলত বর্ণনায় নবীজি (স.) বলেছেন, ‘..যে ব্যক্তি সকাল-বিকাল (সূর্যোদয়ের আগে ও সূর্যাস্তের আগে) এই দুই সময়ে ১০০ বার ‘আল-হামদু লিল্লাহ’ বলল সে যেন আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য ১০০টি ঘোড়ার পিঠে মুজাহিদ প্রেরণ করলো, অথবা আল্লাহর রাস্তায় ১০০টি গাজওয়া বা অভিযানে শরিক হলো..।’ (তিরমিজি: ৫/৫১৩, নং ৩৪৭১; নাসায়ি, সুনানুল কুবরা: ৬/২০৫; সহিহুত তারগিব: ১/৩৪৩)
হাদিসে আরও এসেছে, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যদি আমার কোনো উম্মতকে পুরো দুনিয়া দিয়ে দেওয়া হয় আর সে আলহামদুলিল্লাহ বলে তাহলে এই শব্দ পুরো দুনিয়া থেকে উত্তম। অর্থাৎ, পুরো পৃথিবী পেয়ে যাওয়া এত বড় নেয়ামত নয়, যা আলহামদুলিল্লাহ বলার মধ্যে রয়েছে। কারণ এই পৃথিবী একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে কিন্তু আলহামদুলিল্লাহর সওয়াব থেকে যাবে। (ইবনে মাজা) হাদিসে আরও এসেছে, আল্লাহ তাআলার কাছে প্রিয় বাক্য চারটি— সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবর…(সহিহ মুসলিম: ২১৩৭; ইবনে মাজাহ: ৩৮১১; আবু দাউদ: ৪৯৫৮; মেশকাত: ২২৯৪)
প্রিয়নবী (স.) বলেছেন, যখন তুমি আলহামদুলিল্লাহ বলার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায় করবে তখন আল্লাহ তায়ালা নেয়ামতে বরকত দেবেন। খাওয়া-দাওয়ার পরে, সকল খুশির খবরে, বাথরুমের কাজ সেরে, হাঁচি দিয়ে, যেকোনো কাজ-কর্ম শেষ করার পরে এবং আল্লাহর অসংখ্য নেয়ামতের কৃতজ্ঞতাস্বরূপ সবসময় আলহামদুলিল্লাহ বলা মুমিনের বৈশিষ্ট্য।
আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ সেই বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট হন, যে বান্দা কিছু খেলে আল্লাহর প্রশংসা করে এবং কিছু পান করলেও আল্লাহর প্রশংসা করে (অর্থাৎ আলহামদুলিল্লাহ) পড়ে।’ (মুসলিম: ২৭৩৪, তিরমিজি: ১৮১৬)
আবু মুসা আশআরি (রা.) বর্ণিত হাদিসে মহানবী (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যখন কোনো বান্দার সন্তান মারা যায়, তখন মহান আল্লাহ (জান কবজকারী) ফেরেশতাদের বলেন, ‘তোমরা আমার বান্দার সন্তানের প্রাণ হরণ করেছ কি? তারা বলেন, হ্যাঁ। তিনি বলেন, তোমরা তার হৃদয়ের ফলকে হনন করেছ? তারা বলেন, ‘হ্যাঁ।’ তিনি বলেন, ‘সেসময় আমার বান্দা কী বলেছে?’ তারা বলেন, ‘সে আপনার হামদ (প্রশংসা) করেছে ও ইন্না লিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রা-জিউন পাঠ করেছে।’ মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমার (সন্তানহারা) বান্দার জন্য জান্নাতের মধ্যে একটি গৃহ নির্মাণ করো, আর তার নাম রাখো ‘বায়তুল হামদ’ (প্রশংসাভবন)।’ (তিরমিজি: ১০২১)
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আমি সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং আল্লাহু আকবার বলতে এত বেশি পছন্দ করি যে এই শব্দগুলো আমার কাছে অধিক প্রিয়। পৃথিবীর হৃদয়ে সূর্যের নিচের কিছুর চেয়েও আমি। [সহীহ মুসলিম 4/2072, নং 2695]
আরো পড়ুন-