বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন একজন জননেতা ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার রূপকার। তার জন্ম এবং মৃত্যু সাল (১৭ই মার্চ ১৯২০–১৫ই আগস্ট ১৯৭৫)
শেখ মুজিবুর রহমান সংক্ষিপ্তাকারে শেখ মুজিব বা বঙ্গবন্ধু,
শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি। এবং তিনি ছিলেন দক্ষিণ এশিয়া এর মধ্যে অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব।
ভারত বিভাজন আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন।
পরবর্তী সময়ে পূর্ব পাকিস্তানকে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে স্বাধীন দেশ হিসেবে গোড়ার লক্ষে তৎকালীন সময়ে কেন্দ্রীয়ভাবে নেতৃত্ব এবং সংগ্রাম করেন।প্রথমেই তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসাবে মনোনীত হন, তারপরে তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মনোনীত হন এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
আরও পড়ুন – সাহায্য করার জন্য জাপান পুলিশ বাংলাদেশী প্রবাসীদের পুরস্কৃত করেছে
পশ্চিম পাকিন্তান হতে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা অর্জনের উদ্দেশে গুরুত্তপূর্ণ ভুমেকায় অবদান রাখেন।
এর পরে তিনি ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে ডাক দেন এবং এর পরে তিনি বাংলাদেশের জনগনের ভাষা ও শাধিনতা ফিরিয়ে আনার লক্ষে তিনি মুক্তিযুদ্ধের পেছনের কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
শেখ মুজিবুর রহমানকে শীর্ষস্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করার জন্যে তাকে কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশের “জাতির জনক” বা “জাতির পিতা” উপাধি প্রদান করা হয়।
সর্ব সাধারনের কাছে তিনি “শেখ মুজিব” বা “শেখ সাহেব” নামে পরিচিত।
“শেখ মুজিব” বা “শেখ সাহেব”তার উপাধি “বঙ্গবন্ধু” হিসেবেই অধিক পরিচিত। তার কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের আওয়ামীলীগের সভাপতি এবং বর্তমান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ভারত বিভাগ এবং পরবর্তীকালে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতির প্রথম পর্যায়ে শেখ মুজিব ছিলেন এক নব তরুণ ছাত্রনেতা।
এর পরে তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি মনোনীত হন।
সমাজতন্ত্রের পক্ষে তিনি একজন সংগ্রামী বক্তা হিসেবে তিনি ওই সময়ে পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ জনগনের উপরে সকল ধরনের অন্যায় ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন।
জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার করার জন্যে তিনি ছয় দফা দাবি প্রস্তাব করেন। যে দাবি ঐসময়ের পাকিস্তান সরকার একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী পরিকল্পনা হিসেবে অখ্যাত করেন।
ছয় দফা দাবির মধ্যে প্রথম দাবি ছিল প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন, এবং এর জন্যে তিনি আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের অন্যতম বিরোধী দল হিসাবে পরিণত হন।
আরও পড়ুন – র্যাপার মেগান থি স্ট্যালিয়নকে নাচতে বলার পরে গুলি করে
১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দে ভারত সরকারের সাথে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে তাকে প্রধান আসামি বানিয়ে আগরতলা মামলা দায়ের করা হয়; তবে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের কারণে তা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।
১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে তার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে। তার পরেও তাকে তাকে সরকার গঠন করার সুযোগ দেয়া হয়নি।
পাকিস্তানের নুতুন সরকার গঠন করার জন্যে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খান এবং পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ জুলফিকার আলী ভুট্টোর সাথে শেখ মুজিবের আলোচনা বিফলে যায়।
এবং এই সূত্র ধরে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৫শে মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ঢাকায় নিরীহ বাংগালির উপরে নিসংস ভাবে আক্রমণ করে এবং ঢাকা শহরে গণহত্যা চালায়।
এই জন্যে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা পত্র লিখেন এবং সেটি প্রকাশ করার পূর্বেই রাতে তাকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। এবং সেই স্বাধীনতা ঘোষণা জিয়াউর রহমান পরে শোনান।
ব্রিগেডিয়ার রহিমুদ্দিন খানের সামরিক আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করলেও তা কার্যকর হয়নি।
আরও পড়ুন – Pushpa | পুষ্পা মুভি রিভিউ
নয় মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনীর কাছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করার মধ্য দিয়ে বিশ্ব মানচিত্রে “বাংলাদেশ” নামক স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে।
১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ১০ই জানুয়ারি শেখ মুজিব পাকিস্তানের কারাগার থেকে বের হয়ে এসে বাংলাদেশে ফিরে আসেন। এবং তিনি বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
আদর্শগতভাবে তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্ম নিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী ছিলেন। যা সম্মিলিতভাবে মুজিববাদ নামে পরিচিত।
আরও পড়ুন – করোনা | নিয়োগ পরীক্ষায় করোনা নিয়ে যাবতীয় প্রশ্ন দেখে নিন
এগুলোর উপর ভিত্তি করে একটি সংবিধান প্রণয়ন করা এবং সেই অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনার চেষ্টা করা সত্ত্বেও।
চরম দারিদ্র্য, বেকারত্ব এবং সর্বত্র নৈরাজ্য সহ ব্যাপক দুর্নীতি মোকাবেলায় তিনি কঠিন সময় কাটিয়েছেন।
তিনি 1975 সালে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দমন করতে একদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা চালু করতে বাধ্য হন।
আরও পড়ুন – Booster Doses – আগামী মাস থেকে শুরু হতে পারে বুস্টার ডোজ দেয়া
সাত মাস পরে, 1975 সালের 15 আগস্ট, তিনি এবং তার পরিবারকে একদল সামরিক অফিসার দ্বারা হত্যা করা হয়।
2004 সালে, বিবিসি দ্বারা পরিচালিত একটি জরিপে শেখ মুজিবুর রহমান সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি নির্বাচিত হন।
শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৮ মার্চ (৩রা চৈত্র ১৩২৬ বিএস)
রাত ৮টায় ব্রিটিশ ভারতের তৎকালীন বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার পাটগাতি ইউনিয়নের বাইগার নদীর তীরে টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি শেখ বংশের প্রতিষ্ঠাতা শেখ বোরহানউদ্দিনের বংশধর।
আরও পড়ুন – ওমিক্রন | বাংলাদেশে এই প্রথম ওমিক্রন চিহ্নিত হয়েছে
তার পিতা শেখ লুৎফুর রহমান ছিলেন গোপালগঞ্জ দায়রা আদালতের হিসাবরক্ষক এবং মা সায়েরা খাতুন।
চার মেয়ে ও দুই ছেলের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। শেখ মুজিবুর রহমানের বড় বোনের নাম ফাতেমা বেগম।
বড় বোন আছিয়া বেগম, সেজ বোন হেলেন ও ছোট বোন লাইলী এবং ছোট ভাইয়ের নাম শেখ আবু নাসের।
তাঁর দাদা শেখ আবদুল মজিদ তাঁর নাম রাখেন ‘শেখ মুজিবুর রহমান’। তার ছোটবেলার ডাক নাম ছিল ‘খোকা’।
ছোটবেলা থেকেই মানুষের প্রতি তার সহানুভূতিশীল মনোভাব ছিল।
আরও পড়ুন – আজ ক্যাটরিনার হাত মেহেদিতে রঙিন হবে
দুর্ভিক্ষের সময় তিনি তার ক্ষেত থেকে ধান বিতরণ করতেন। অন্যদের কাছ থেকে চাল সংগ্রহ করে গরিব ছাত্রদের মাঝে বিতরণ করতেন।
শেখ মুজিব, 1940 সালে একটি ফুটবল খেলায় ট্রফি বিজয়ী । শেখ মুজিব 1926 সালে গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাত বছর বয়সে শিক্ষাজীবন শুরু করেন।
নয় বছর বয়সে তিনি ১৯২৯ সালে গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলের তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হন।
পিতার বদলির কারণে তিনি ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে মাদারীপুর ইসলামিয়া বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীতে ভর্তি হন এবং ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সেখানে অধ্যয়ন করেন।
আরও পড়ুন – সংসদে নুসরাতের কণ্ঠ উচ্চকিত
1934 সালে তিনি বেরিবেরি নামক একটি জটিল রোগে আক্রান্ত হন এবং তার হৃদপিন্ড দুর্বল হয়ে পড়ে।
1938 সালে তিনি গ্লুকোমা রোগে আক্রান্ত হন এবং তাকে অস্ত্রোপচার করতে হয়েছিল এবং সম্পূর্ণরূপে পুনরুদ্ধার করতে দীর্ঘ সময় লেগেছিল।
এ কারণে তিনি 1934 থেকে 1938 সাল পর্যন্ত চার বছর তাঁর স্কুলে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি।
1938 সালে সুস্থ হওয়ার পর তিনি গোপালগঞ্জের মথুরানাথ ইনস্টিটিউট মিশন স্কুলের সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি হন।
সে সময় ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের কর্মী কাজী আবদুল হামিদ (হামিদ মাস্টার) এবং তার গৃহশিক্ষক বহু বছর কারাবরণ করেন।
আরও পড়ুন – সুশান্তের প্রাক্তন অঙ্কিতা বিয়ের কার্ড বিতরণ করছেন
পরে তিনি 1942 সালে গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন।
1944 সালে, শেখ মুজিব কলকাতার ইসলামিয়া কলেজ (বর্তমানে মৌলানা আজাদ কলেজ) থেকে স্নাতক হন।
এবং 1948 সালে ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত এই কলেজটি তখন বেশ বিখ্যাত ছিল। ইসলামিয়া কলেজে পড়ার সময় বাকের হোস্টেলের ২৪ নম্বর কক্ষে থাকতেন।
1996 সালে, পশ্চিমবঙ্গ সরকার তার সম্মানে “বঙ্গবন্ধু স্মৃতি কক্ষ” নির্মাণের জন্য 23 এবং 24 নম্বর কক্ষ একত্রিত করে।
আরও পড়ুন – ক্যাটরিনা কাইফ পাঞ্জাবি শেখার জন্য বাড়িতে টিউশনি নেন
২০১১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি কক্ষের সামনে তার আবক্ষ মূর্তি রাখা হয়।
ভারত বিভাগের পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন। তাই
1949 সালে বে-ক্লাস 4 কর্মচারীদের দাবির প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে বহিষ্কার করেছিল।
আরও পড়ুন – নতুন ধরনের করোনা, ওমিক্রন সম্পর্কে কী জানা যায়?
পরবর্তীতে, 14 আগস্ট 2010, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করে।